অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজীলত ও নিয়ম:

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজীলত ও নিয়ম:
📌
 
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া:

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন করা, তার খোঁজ-খবর নেওয়া ও সান্ত্বনার বাণী শোনানো প্রিয় নবীর সুন্নাত। নবী মুহাম্মাদ (স.) রোগীর সেবাযত্ন করাকে সর্বোৎকৃষ্ঠ নেক আমল ও ইবাদত ঘোষণা করেছেন
হাদীস শরীফে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজীলত বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া এবং সহানুভূতি প্রকাশ করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদীসে এই কাজকে একজন প্রকৃত মুসলিমের অন্যতম কর্তব্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—
عن أبي هريرة أن رسول الله ﷺ قال حق المسلم على المسلم ست. قيل ما هن يا رسول الله؟  قال إذا لقيته فسلم عليه وإذا دعاك فاجبه وإذا استنصحك فانصح له وإذا عطس و فحمد الله فشمته وإذا مرض فعده وإذا مات فاتبعه
❤️ মহানবী (স.) বলেছেন—
“একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক আছে । জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল ! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন, 
(১) দেখা হলে সালাম দেওয়া, 
(২) দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা, 
(৩) পরামর্শ চাইলে সুপরামর্শ দেওয়া, 
(৪) হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, 
(৫) অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া খোঁজ-খবর নেওয়া,
(৬) মৃত্যুবরণ করলে জানাজায় উপস্থিত হওয়া ।”            (মুসলিম শরীফ)
❤️ অন্য এক হাদীসে এসেছে,— 
রসূল (স.) বলেছেন— “যে মুসলিম সকালে কোনো অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। এবং যদি সে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তবে তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়।”      (তিরমিজি শরীফ) 
❤️ অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (স.) বলেছেন— “কোনো মুসলিম যখন তার অসুস্থ কোনো মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য যায়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে।”   (মিশকাত শরীফ) 
❤️ আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে— প্রিয় নবী (স.) বলেছেন— “যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে বলতে থাকেন, কল্যাণময় তোমার জীবন এবং তোমার এই পথ চলাও কল্যাণময়। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।”         (তিরমিজি)

 📌 রোগী দেখার নিয়ম ও আদব : 

) অজুসহকারে রোগী দেখতে যাওয়া। 
এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন — “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে।   (আবু দাউদ)
২)রোগীর অবস্থা বুঝে শরীরে হাত রেখে রোগের কথা জিজ্ঞাসা করা।
রসূল (স.) বলেছেন, শুশ্রুষার পূর্ণতা হলো- রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন?        (তিরমিজি)
৩) রোগীর সামনে এমন কথা বলা যাতে সে সান্তনা লাভ করে।
রসূলুল্লাহ (স.) কোনো রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন—
لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ اِنْ شَآءَ اللّهُ 
উচ্চারণ: “লা-বাসা তহুরুন ইন শা আল্লাহ”
অর্থ: “কোনো ভয় নেই, ইন-শা-আল্লাহ খুব শীঘ্রই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।”
৪)রোগী দেখতে গিয়ে রোগীর কাছে খুব বেশি সময় না থাকা। 
রসূল (স.) বলেন, রোগী দেখার সময় হলো- উটের দুধ দোহন পরিমাণ। আরেক বর্ণনায় এসেছে, রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো- তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।
৫) রোগীর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। 
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নাত হলো- রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং উঁচু আওয়াজে কথা না বলা।  
৬) রোগীর জন্য দুয়া করা।
রসূল (স.) বলেছেন, কোনো রোগীর কাছে গিয়ে এই দুয়াটি সাতবার পড়লে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে ঐ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে ইন-শা-আল্লাহ ! দুয়াটি হলো- 
أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَن يَشْفِيَكَ
উচ্চারণ: আসআলুল্লাহাল আজীম, রব্বাল আরশিল আজীম, আই ইয়াশ ফিয়াক। 
অর্থ: “আমি মহান আরশের মালিক মহান আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”
৭) রোগীর কাছে নিজের জন্য দুয়া চাওয়া।
রসূল (স.) বলেছেন—“তোমরা রোগী দেখতে গেলে তাকেও তোমাদের জন্য দুয়া করতে বলো; কেননা তার দুয়া ফেরেশতাদের দুয়ার সমতুল্য।”    (ইবনে মাজাহ)
__________________
🤲দুয়াপ্রার্থী—সেখ সালাম আলী

Comments