কুরআনের আলোকে মুমিনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

কুরআনের আলোকে মুমিনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? মুমিনের গুণাবলী

আল্লাহ তা'য়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাতের জন্য। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেছেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের অনুসরণ করো না।”
যিনি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করেন তিনিই মুমিন। মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে জানিয়ে দিয়েছেন। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন:

“মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে —
যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত,
যারা অনর্থক কথা ও কাজে লিপ্ত হয় না,
যারা যাকাত দেয়,
যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না; কিন্তু কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে;
এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে সতর্ক থাকে,
যারা তাদের নামায সমূহের খবর রাখে,
তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে  শীতল ছায়াময় জান্নাতুল ফিরদাউসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”  [সূরা মু'মিনূন : আয়াত ১-১১]


উপরের আয়াতগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে যাবতীয় প্রকার আল্লহর হক্ব ও বান্দার হক্ব এবং এতদসংশ্লিষ্ট সব বিধিবিধান প্রবিষ্ট হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি এসব গুণে গুণান্বিত হয়ে যায় এবং এতে অটল থাকে, সে পরিপূর্ণ মু'মিন এবং দুনিয়া ও আখিরতের সাফল্যের হকদার!

এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনের বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা'য়ালা বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হলো—

১) প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই যাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং ঐ ব্যাপারে পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী।

[সূরা হুজুরত : ১৫]


২) প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই, আল্ল-হকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপরই ভরসা করে। তারা নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ করে। এ ধরনের লোকেরাই প্রকৃত মু'মিন। তাদের জন্য তাদের রবের (আল্লহর) কাছে রয়েছে বিরাট মর্যাদা, ভুল-ত্রুটির ক্ষমা ও উত্তম রিযিক।

[সূরা আনফাল : ২-৪]


৩) মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে।

[সূরা নূ-র : ৫১]


৪) তারাই এ ধরনের লোক যারা (এ নবীর দা'ওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়।

[সূরা র'দ : ২৮]


৫) মু’মিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আল্লহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্ত্বার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।

[সূরা আ-লি ইমরন : ২৮]


৬) মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে।

[সূরা হুজুরত : ১০]


৭) মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লহর রহমত নাযিল হবেই। অবশ্যই আল্লহ সবার ওপর পরাক্রমশালী এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ।

[সূরা তাউবা : ৭১]


৮) এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন জান্নাত দান করবেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে এবং তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে। এসব চিরসবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

[সূরা তাউবা : ৭২]


 ৯) সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে (তোমার প্রতি) যে, তাদের জন্য আল্লহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ।

[সূরা আহযাব : ৪৭]


  ১০) আমি তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তাঁরা তাদের কাছে আসেন উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। তারপর যারা অপরাধ করে তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর মু'মিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।

[সূরা রুম : ৪৭]


১১) মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা পরিপূর্ণ মুমিন হয়ে থাকো।

[সূরা আ-লি ইমরন : ১৩৯]


১২) হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, তোমরা আল্লহ (এর দ্বীন) কে সাহায্য করো ; তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদমকে সুদৃঢ় করে দেবেন।

[সূরা মুহাম্মাদ : ৭]


 ১৩) যারা ঈমান আনে আল্লহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে ত্বগুত। সে তাদের আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। ওরা জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে ওরা চিরকালের থাকবে।

[সূরা বাক্বরহ্ : ২৫৭]


১৪) পুরুষ বা নারী যে-ই সৎকাজ করবে, সে যদি মু’মিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং (আখিরাতে) তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে।

[সূরা নাহল : ৯৭]


১৫) আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে। আর যারা এরপর কুফরী করবে তারাই ফাসিক।

[সূরা নূর : ৫৫]


১৬) নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শীঘ্রই রহমান (আল্লাহ) তাদের জন্য অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন।

[সূরা মারয়াম : ৯৬]


১৭) ঈমানদারদেরকে আল্লাহ একটি শাশ্বত বাণীর ভিত্তিতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে প্রতিষ্ঠা দান করেন। আর জালিমদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা চান তাই করেন।

[সূরা ইবরহীম : ২৭]

১৮) তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নি'য়ামাতে পরিপূর্ণ জান্নাত, যেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এ হচ্ছে আল্লহর অকাট্য প্রতিশ্রুতি এবং তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়।

[সূরা লুক্বমান : ৮]

২০) লোকেরা বললো - তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছে -আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী। [আ-লি ইমরন : ১৭৩]


আল্লাহ রব্বুল 'আলামীন আমাদের সকলকে প্রকৃত মু'মিন হওয়ার তাউফিক দান করুন।

আ-মীন।

Comments