ইসলামী আদব-শিষ্টাচার : সালাম ও অনুমতি প্রার্থনা

ইসলামী আদব-শিষ্টাচার : সালাম ও অনুমতি প্রার্থনা Learn with SALAM

সালাম ও অনুমতি প্রার্থনা :

অন্যের ঘরে প্রবেশের নিয়ম —

অনুমতি প্রার্থনার আদবের প্রতি যত্নবান হতে হবে। অন্যের ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসলামের অনন্য আদব-শিষ্টাচার রয়েছে। এ আদব এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে কারীমে এ বিষয়ে মুুমিনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একজন আদর্শ মুসলিম কখনো অন্যের ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না। এ তো আল্লাহ্ তাআলারই নিদের্শ। আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন —

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتًا غَیْرَ بُیُوْتِكُمْ حَتّٰی تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَهْلِهَا، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ. فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِیْهَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتّٰی یُؤْذَنَ لَكُمْ، وَ اِنْ قِیْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰی لَكُمْ ،  وَ اللّٰهُ   بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِیْمٌ

অর্থ : হে মুমিনগণ! নিজের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে ততক্ষণ প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ করো ও ঘরের লোকদেরকে সালাম দাও। এ নিয়ম তোমাদের জন্য উত্তম। সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া না হয়, তাতে প্রবেশ করো না। তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাও;  তবে ফিরে যেও। এটাই তোমাদের পক্ষে শুদ্ধ। তোমরা যা কিছু করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সব জানেন।     [সূরা নূর: ২৭-২৮]


🏩 অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ করলে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে। তেমনি খন্ডিত কোনো দৃশ্যের কারণে মনে জন্ম নিতে পারে কুধারণা। কিংবা কোনো ঘটনার পূর্বাপর না জানার কারণে সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঐসব গোনাহ  থেকে মুক্ত থাকতে এবং অপ্রীতিকর দৃশ্য বা ঘটনার অবতারণা এড়াতে ইসলাম অনুমতি গ্রহণেরও কিছু আদব বর্ণনা করেছে। সেগুলো হলো —

📌 ১) অনুমতি নেওয়ার সময় দরজার মুখোমুখি দাঁড়াবে না। বরং দরজার ডান বা বাম পাশে দাঁড়াবে। যাতে দরজা খুললে ভেতরে দৃষ্টি না পড়ে। 

রসূলুল্লাহ (স.) এমনটি করতেন। হাদীসে এসেছে-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا أُتِيَ بَابًا يُرِيدُ أَنْ يَسْتَأْذِنَ لَمْ يَسْتَقْبِلْهُ جَاءَ يَمِينًا وَشِمَالًا فَإِنْ أُذِنَ لَهُ وإلا انصرف

অনুবাদ: নবীজী (স.) যখন কারো দরজায় যেতেন তখন অনুমতি নেওয়ার জন্য দরজার মুখোমুখি নয় বরং ডানে বা বামেই থাকতেন। যদি তাঁকে অনুমতি দেওয়া হতো (তাহলে প্রবেশ করতেন) নয়তো ফিরে আসতেন। [আলআদাবুল মুফরাদ]

অনুমতি গ্রহণের উপকারিতা হলো, দৃষ্টির হেফাজত।  রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন —(  إِنّمَا جُعِلَ الِاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ البَصَر)     অর্থ: অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়াই হয়েছে (অনাকাঙ্ক্ষিত) দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।    [বুখারী]


📌 ২)  কারো ঘরে প্রবেশের আগে  প্রথমে সালাম দেবে। সালাম দেওয়ার অর্থ হলো অনুমতি চাওয়া। (সালাম দেওয়ার আগে অনুমতি চাওয়া সঠিক পদ্ধতি নয়।)


📌 যখন ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাওয়া হবে, তখন স্পষ্ট করে নিজের নাম বলবে, যে নামে ঐ ঘরের লোকেরা চেনে। (অস্পষ্ট কোনো শব্দে-পরিচয় দেবে না।)

রসূলুল্লাহ (স.)  তাঁর সাহাবীদের এটি শিখিয়েছেন। হযরত জাবির (রা.) বলেন, “একবার আমি আমার পিতার ঋণ পরিশোধের বিষয়ে কথা বলতে নবীজীর কাছে গেলাম। দরজায় আওয়াজ দিলে নবীজী (স.) জিজ্ঞেস করলেন- কে? বললাম, আমি। তখন নবীজী (স.) বললেন - আমি, আমি। (এটা আবার কে!) এভাবে ‘আমি’ বলে পরিচয় দেওয়াটা নবীজী অপছন্দ করলেন।”   [বুখারী]

অর্থাৎ তোমার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে   স্পষ্টভাবে বলো - “আমি ..<অমুক>.. । স্পষ্ট করে নাম বলতে হবে।


📌 ৪)  অনুমতি চাওয়াতে যদি ঘরওয়ালা ফিরে যেতে বলে, তখন ফিরে যাবে। এমনকি অন্তরে এর জন্য কোনো সংকীর্ণতা রাখবে না। কারণ কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। হতে পারে তার এমন কোনো ওজর রয়েছে যা সে তোমার কাছে বলতে পারছে না।


আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামী আদব মেনে চলার তাওফীক দান করুন।   (আ মীন !)

Comments