ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও অপব্যয়:

ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও অপব্যয়,  অপচয়কারী শয়তানের ভাই

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম মিতব্যয়, সরলতা ও সংযমের নির্দেশনা দিয়েছে। অপচয়, বিলাসিতা প্রদর্শনের প্রতি শুধু নিরুৎসাহিতই করেনি বরং এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সূরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন—

کُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا وَلَا تُسۡرِفُوۡا ۚ  اِنَّهُ لَا  یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

“তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।”

 অর্থাৎ আল্লাহ তাআ’লার অসংখ্য নেয়ামত থেকে হালাল খাদ্যসমূহ খাওয়া ও পান করা যাবে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।

আল্লাহ অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তুর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছেন। ইসলামে সকল কিছুর ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—

وَاٰتِ ذَا الۡقُرۡبٰی حَقَّهُ وَالۡمِسۡکِیۡنَ وَابۡنَ السَّبِیۡلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا 

اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَکَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّهِ کَفُوۡرًا

“তোমাদের আত্মীয়-স্বজনকে, মিসকীন ও মুসাফিরকে তাদের হক্ দিয়ে দাও। কিন্তু কোনভাবেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রব আল্লাহর প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বানী ইসরঈল: ২৬,২৭)

বাংলায় অপচয় ও অপব্যয় শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হলেও আরবীতে এ দুইটি শব্দের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে—

অপচয়কে আরবীতে বলা হয় ‘ইসরফ’ (إسراف)। সেটা হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় খরচ করা।

আর অপব্যয়কে আরবীতে বলা হয় ‘তাবযীর’ (تبذير) । ইমাম শাফঈ (র) বলেন, “তাবযীর হচ্ছে অযৌক্তিক উপায়ে সম্পদের অপব্যবহার করা।”   

ইসরফ বা অপচয় হলো - খাদ্য, পানীয়, অর্থ-সম্পদ, ইবাদত প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয়। পক্ষান্তরে তাবযীর বা অপব্যয় শুধুমাত্র সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে উভয়টিকেই নিষেধ করা হয়েছে। 

অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকত কমে যায়।

হাদীসে এসেছে— “যা ইচ্ছা পানাহার করো এবং যা ইচ্ছা পরিধান করো, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাকো— (১) তাতে অপচয় যেন না হয়; (২) তাতে গর্ব ও অহঙ্কার যেন প্রকাশ না পায়।” [বুখারী]

একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— 

“একবার প্রিয়নবী (স.) সাহাবী সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা.)-এঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় সাদ (রা.) অজু করছিলেন। (অজুতে বেশি পানি খরচ হতে দেখে) প্রিয়নবী (স.) বললেন, হে সাদ! এভাবে অপচয় করছো কেন? সাদ (রা.) বললেন, অজুতেও কি অপচয় রয়েছে? প্রিয়নবী (স.) বললেন, হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহমান নদীর তীরে অবস্থান কর না কেন।” (আহমদ ও ইবন মাজাহ্)


খাদ্য গ্রহণের সময় প্রিয়নবী (স.) একটি স্বাভাবিক সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন—

“আদম সন্তান যে সমস্ত ভাণ্ডার পূর্ণ করে, তার মধ্যে পেট হল সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য অল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। তবে এর চেয়ে বেশি করতে চাইলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য যেন সে নির্দিষ্ট করে।” [তিরমিযী, ইবন মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ]

ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম ও মধ্যপন্থা শেখায়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—

وَ لَا تَجۡعَلۡ یَدَكَ مَغۡلُوۡلَةً اِلٰی عُنُقِكَ وَلَا تَبۡسُطۡهَا کُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا 

“তুমি তোমার হাত (কৃপণতাবশে) তোমার ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখো না আবার (অপব্যয়ী হয়ে) তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না; তাহলে তোমাকে নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে।” (সূরা বানী ইসরঈল- ২৯)

একজন মুমিনের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন—

“তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।” (সূরা ফুরকন : ৬৭)। 

অতএব, আমাদের উচিত মহান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে তার সঠিক ব্যবহার করা; সর্ব অবস্থায় আমাদের মিতব্যয়ী হওয়া, অপচয় ও অপব্যয় একদমই না করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। (আ-মীন)

দুয়াপ্রার্থী—সেখ সালাম আলী

Comments