গরু আমাদের দুধ দেয় না, আমরা কেড়ে নিই। গাধাও মুট বয় না, ধোপারা এককালে জোর করে কাজটি করাতো। হিসেব মত সিংহীও দুধ দেয়, সিংহও ওজন বইতে সক্ষম। কিন্তু সিংহকে দিয়ে ওসব করানো মানুষের ক্ষমতার বাইরে।
ওই জন্য একটু বোকা আর ভালো মানুষদের গরু কিংবা গাধার সাথে তুলনা করা হয়। এই দুটো প্রাণীর নামে কোনো মানুষকে ডাকা মানে সেটা অপমান করা। কিন্তু কাউকে সিংহ বললে সে উল্টে গর্ববোধ করে। সেই সিংহ, যে আজ অবধি মানুষের উপকার করল না, যার সামনে মানুষ গেলে মুহূর্তের মধ্যে পরপারে চলে যাবে, সেই সিংহ হচ্ছে মানুষের চোখে রাজা। উপকারী গরু, গাধা হচ্ছে হাসির বস্তু।
অতিরিক্ত ভালো হওয়ার সমস্যাই এটা। অতিরিক্ত ভালো মানুষরা কারোর কাছে গুরুত্ব পায় না। তুমি নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করতে থাকো, ভালো মনে কারোর ক্রমাগত উপকার করতে থাকো, আঘাতের পর আঘাত সহ্য করেও হাসিমুখে কাউকে ভালোবাসতে থাকো, তুমি তার চোখে 'গাধা' ছাড়া আর কিছুই হবে না। যদি মনে করো সে একদিন এগুলোর মূল্য বুঝবে, তাহলে তুমি সত্যিই গাধা। কারোর কাছে নিজের দাম পেতে গেলে একবার অন্তত সিংহের মত হতেই হবে।
মৃত্যুর পরও ব্যাংকে আপনার টাকা রয়ে যায়। দান করবেন বলে কথা দিয়েও হয়তো কয়েকজনকে দেন নি। অথচ আমরা আমাদের জীবদ্দশায় খরচ করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পাই না।
আসল সত্যটি হচ্ছে — অধিক ধনবান হওয়ার চেয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করা বেশি জরুরি। তাই অধিক ধনবান হওয়ার জন্য অবিরাম শ্রম না দিয়ে দীর্ঘ এবং সুস্থ্য জীবন যাপন করার চেষ্টা করা উচিত এবং নিজেকে সেভাবে গড়া উচিত।
◾আমাদের জীবনের নানা ঘটনাতেই এ সত্যটি উপলব্ধি করা যায়—
- প্রাসাদতুল্য মহামূল্যবান অট্টালিকার ৭০% অংশে কেউ বসবাস করে না।
- কারো কারো এক আলমারি কাপড়-চোপড়ের বেশির ভাগ কোনদিনই পরা হয়েই ওঠে না।
- সারা জীবনের পরিশ্রমলব্ধ অর্থের ৭০% আসলে অপরের জন্যই। আপনার জমানো অর্থ যাদের জন্য রেখে যাবেন, বছরে একবারও আপনার জন্য দুয়া করার সময় হয়তো তাদের হবে না। এমনকি বেঁচে থাকতেই আপনার অর্থের প্রাচুর্যে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো আপনাকে হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারে। তাই বেঁচে থাকতেই ১০০% এর সুরক্ষা এবং পূর্ণ সদ্ব্যবহার করাই শ্রেয়।
📌 আমাদের করণীয় কী?
- মহান আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করুন। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও কিছু জিকির করুন।
- অসহায়কে দান করুন ।
- বেশি কৃপণতা করবেন না।
- পছন্দের (পুষ্টিকর) খাবার খান। পিপাসার্ত না হলেও পানি পান করুন।
- গীবত করা, অন্যের দোষ ধরা, মিথ্যাকথা বলা ত্যাগ করুন।
- ঝগড়া এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করবেন না।
- মানুষকে ক্ষমা করে দিন।
- রাগ পুষে রাখবেন না। মনে রাখবেন কেউই রগচটা মানুষকে পছন্দ করে না। আড়ালে-আবডালে পাগলা বলে ডাকে।
- আপনার সিদ্ধান্তটি সঠিক জেনেও কখনো কখনো ছাড় দিতে হয়।
- ক্ষমতাধর হলেও বিনয়ী হন।
- ধনী না হলেও অল্পে তুষ্ট থাকুন।
- আকাশ, ভোরের সূর্যোদয়, রাতের চাঁদ এবং মাঝে মাঝে সমুদ্র দেখবেন। বৃষ্টিতে বছরে একবার হলেও ভিজবেন।
- মহাব্যস্ত থাকলেও নিয়মিত ব্যায়াম করুন; ২০-৩০ মিনিট হাঁটুন। আর প্রতিদিন ১০ মিনিট হলেও শরীরে রোদ লাগাবেন।
- সবার সাথে মিশবেন ছোটো-বড় ভাববেন না।
- জীবনসঙ্গীকে মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান, হাত ধরে হাঁটুন। তাকে বুঝতে দিন, সেই আপনার সবচেয়ে আপন। কারণ, আপনার সবরকম দুঃসময়ে সেই পাশে থাকে বা থাকবে। অন্যরা নয়।
- সর্বদা হাসিখুশি থাকুন। সুযোগ পেলেই কৌতুক পড়ুন/দেখুন। পরিবারের সবার সঙ্গে মজার ঘটনাগুলো শেয়ার করবেন। মাঝে মাঝে প্রাণবন্ত ভাবে হাসবেন।
- জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
Comments
Post a Comment