তাওবা ও ইস্তিগফার:

তাওবা ও ইস্তিগফার, তওবা, ক্ষমা, মাফ চাওয়া

ইস্তিগফার কী? 
ইস্তিগফার কিভাবে করবেন? 
ইস্তিগফার এর ফজিলত এবং ৫টি ইস্তিগফারের দুয়া ও সর্বশ্রেষ্ট ইস্তিগফার জেনে নিন।

ইস্তিগফার : ইস্তিগফার শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া, আর তাওবা হলো আল্লাহর পথে ফিরে আসা। ২ টি শব্দের অর্থ প্রায় কাছাকাছি। ইস্তিগফার সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ: ইস্তিগফার সম্বন্ধে কুরআনে আছে —
"তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)

 "অতঃপর তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।’ (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ৩)।

"...আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)।

তাওবা : তাওবার অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। তাওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ নিজ কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। 

নিয়ম: তাওবার জন্য করণীয় হলো, নিজ কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায় মনোযোগী হওয়া। 
তাওবা সম্পর্কে কুরআনে রয়েছে— 
"হে ঈমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবাহমান।” (সুরা-৬৬ তাহরিম, আয়াত: ৮)।

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।” (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)।


রসূলুল্লাহ (স.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ অথবা ১০০ বার তাওবা ও ইস্তিগফার করতেন। তাহলে আমাদের মতো গুনাহগারদে কতবার ইস্তিগফার করা উচিত❓

কিভাবে ইস্তিগফার করবেন?
ইস্তিগফার করার বা ক্ষমা চাওয়ার দুয়া সমূহ।
 

সব চেয়ে ছোটো ইস্তিগফার হলো।
✅দুয়া-১:
 أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হ।
অনুবাদ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। 
প্রতি ওয়াক্তের ফরয নামাজে সালাম ফিরানোর পর রসূলুল্লাহ (স.) এই দুয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১] 

নবীজী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু ‘আসতাগ ফিরুল্লাহ্’ বলেও ইস্তিগফার করতেন। এটা সংক্ষিপ্ততম ইস্তিগফার। চলতে ফিরতে এর মাধ্যমে ইস্তিগফার পড়ার অভ্যাস করা যায়। টয়লেট বাথরুম ছাড়া সারাক্ষণ এই ইস্তিগফার টি পড়তে থাকুন, এর ফজিলত অনেক বেশি।

✅দুয়া-২:
 أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি। 

✅দুয়া-৩:
  أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্‌তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মা'বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরোস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি। 
এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]

✅দুয়া-৪:
সাইয়েদুল ইস্তিগফার-বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দুয়া:
হাদীসে এসেছে, নবীজী একটি ইস্তিগফারকে "সাইয়িদুল ইস্তিগফার তথা শ্রেষ্ট ইস্তিগফার বলে মন্তব্য করেছেন। সায়্যিদুল ইস্তিগফার সব চেয়ে শ্রেষ্ট ইস্তিগফার। এবং এটি সকাল-সন্ধ্যার জিকির।
 اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা সা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা

অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃতো গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

   এই দুয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬] 

এই দুয়া গুলো পড়ার মাধ্যমে ইস্তিগফার করুন। তবে সব চেয়ে উত্তম হলো সায়্যিদুল ইস্তিগফার। 
উল্লিখিত ইস্তিগফার সবার মুখস্থ থাকা উচিত। 

হাদীসে এসেছে —
طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا.
যার আমলনামায় ইস্তিগফার বেশি থাকবে তাঁর জন্য সুংবাদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

অন্য হাদীসে এসেছে —
مَنِ أكْثَرَ مِنَ الاسْتِغْفَارِ، جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ. إسناده ضعيف
যে ব্যক্তি সবসময় ইস্তিগফার করে অর্থাৎ বেশি বেশি আল্লাহ্ পাকের নিকট মাফ চাইতে থাকে, আল্লাহ্ তা'আলা তার সকল মুশকিল আসান করে দেন, পেরেশানিগুলি দূর করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (মুসনাদে আহমদ)

সুবহানাআল্লাহ্! আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করার তাওফীক দান করুন। (আমীন..!)

Comments