দুয়া ইবাদতের মূল। মানুষের ভাগ্য তার প্রচেষ্টা ও দুয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। যেমন হাদীসে এসেছে,
রসূল (স.) বলেছেন— "দুয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।" (তিরমিজি)
দুনিয়ার কোন মানুষের কাছে যদি আমরা বারবার কিছু চাই তবে সে রাগ করে বা বিরক্ত হয়, কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন এত বেশি দয়ালু যে, তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি খুশি হন বরং না চাইলে তিনি রাগ করেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
রসূল (স.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।" (তিরমিজি)
এছাড়াও স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই তার কাছে চাওয়ার জন্য এবং যা চাইব তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেন,
"তোমরা আমার কাছে দুয়া করো। আমি তোমাদের দুয়া কবুল করব।" (সূরা মুমিন: ৬০)
"হে রসূল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দুয়া করে, আমি তার দুয়া কবুল করি।" (সূরা বাকারা ১৮৬)
⚫ দুয়া কবুলের উত্তম সময়:
দুয়া করা বড় উপকারী ইবাদত। তবে কিছু বিশেষ সময় রয়েছে যে সময়ে দুয়া করলে দুয়া অবশ্যই কবুল হয়। দুয়া কবুলের উত্তম সময়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:-
📌 ১) রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুয়া করলে কবুল হয় :
হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, "প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নীচের আসমানে নেমে এসে বলেন, কে আছো, আমাকে ডাকো; আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, আমার কাছে চাও; আমি তোমাকে দান করবো। কে আছো? আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী; আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রসূল (স.) বলেছেন, "শেষ রাতের যে কোনো সময় কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেওয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে।" (মুসলিম)
📌 ২) আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দুয়া কবুল হয়:
রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, "আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (আবু দাউদ)
📌 ৩) ফরজ নামাজের পরের দুয়া কবুল হয়:
সাহাবি হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রসূলকে (স.) জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ্! কোন সময়ের দুয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে। (তিরমিজি)
📌 ৪) সেজদার দুয়া:
রসূল (স.) বলেছেন, যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়, তাহলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও। (মুসলিম)
📌 ৫) জুমার দিনের দুয়া কবুল হয়:
রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জুমার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পূরণ করবেন। এবং তিনি তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। (বুখারী)
মুসলিম শরিফে পাওয়া যায়, জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময়, ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।
📌 ৬) রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দুয়া কবুল হয়:
রসূল (স.) বলেছেন— "৩ ব্যক্তির দুয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (১) যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। (২) ন্যায় পরায়ণ শাসক। (৩) মজলুম ব্যক্তির দুয়া। (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি)
📌 ৭) শবে কদরের দুয়া কবুল হয় :
রসূল (স.) বলেছেন— "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
📌 ৮) আরাফাতের দিনের দুয়া কবুল হয়:
রসূল (স.) বলেছেন, "দুয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দুয়া। (তিরমিযি)
📌 ৯) বৃষ্টির হওয়ার সময়ের দুয়া কবুল হয়:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— "দুই সময়ের দুয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দুয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দুয়া। (আবু দাউদ)
এছাড়াও নির্যাতিত অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায়, বিপদ-আপদের সময়, সফরের সময় দুয়া কবুল হয়। সন্তানের জন্য মা-বাবার দুয়া খুব বেশি কবুল হয়।
আমাদের উচিত উল্লিখিত সময়সহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দুয়া করা ও আল্লাহকে স্মরণ করা।
Comments
Post a Comment